লাইফস্টাইল

মেদ বা ভূড়ি কমানোর ১০ টি সহজ উপায়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আচ্ছালামু আলাইকুম। সবাইকে স্বাগতম আর একটি নতুন আর্টিকেল। আজকে আলোচনা করবো পেটের মেদ বা ভূড়ি কমানোর কয়েকটি টিপস্ নিয়ে। তাই যারা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য আমার এই আর্টিকেল।

আপনি কি মেদ বা ভূড়ি নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আর চিন্তা করতে হবে না। চিন্তার অবসান ঘটাতে আমার আর্টিকেল লেখার মুল উদ্দেশ্য। তাই বন্ধুরা তোমরা যারা এই সমস্যায় জর্জরিত,সঠিক ভাবে খেতে পারছো না,হাঁটতে পারছোনা ইত্যাদি নানারকম সমস্যা ফেস করতেছো। তাদের কাছে একটাই অনুরোধ একটু সময় ব্যায় করে নিচে উল্লেখ্যিত মেদ বা ভূড়ি কমানোর টিপস গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অতিরিক্ত মেদ বা ভূড়ির জন্য কি কি রোগ দেখা দেয়?

আমরা সাধারণত কোনো কিছু না ভেবে যে কাউকে মোটা বা চিকন বলে থাকি। আসলে ব্যপরটা মোটেই তেমন নয়। বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স নির্নয় করার মাধ্যমে যে কাউকে মোটা বা চিকন বলা হয়ে থাকে। বিএমআই নির্নয় করার ক্ষেত্রে দেহের দৈহিক ওজন এবং উচ্চতার প্রয়োজন।

বিএমআই নির্নয় করার পদ্ধতি হচ্ছে দেহের দৈহিক ওজন(কিলোগ্রাম)/ব্যক্তির উচ্চতা(মিটার^২)। এই পদ্ধতি অনুযায়ী কোন ব্যক্তির
১. বিএমআই ১৮.৫০-২৪.৯৯ হলে স্বাভাবিক ওজন।
২. বিএমআই ২৫-২৯.৯৯ হলে অতিরিক্ত ওজন।
৩. বিএমআই ৩০-৩৪.৯৯ হলে স্থুলতার ১ম স্তর।
৪. বিএমআই ৩৫-৩৯.৯৯ হলে স্থুলতার ২য় স্তর।
৫. বিএমআই ৪০+ হলে স্থুলতার ৩য় স্তর।

অতিরিক্ত মেদ ভূড়ি জন্য যেসব রোগ দেখা দিতে পারে। তা হলোঃ-
১. করোনারি হৃদরোগ
২. উচ্চ রক্তচাপ
৩. ক্যান্সার(স্তন,কোলন)
৪. টাইপ-২ ডায়াবেটিস
৫. স্ট্রোক
৬. স্লিপ অ্যাপনিয়া
৭. অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
৮. পিত্তথলির অসুখ
৯. বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি।

মেদ বা ভূড়ি বাড়ার কারনগুলো

১. জিনগতঃ মেদ বা ভূড়ি বিস্তারের ক্ষেত্রে গুচ্ছ জিন কাজ করে। বাবা-মায়ের যদি ভূড়ি বা মেদ থাকে তাহলে সন্তানের ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে মেদ বা ভূড়ি হয়ে থাকে।
২. অ্যালকোহল জাতীয় পানি পান করা, ফাস্টফুড গ্রহন করা, খাওয়া শেষ চর্বি ও চিনিযুক্ত ডেসার্ট খাওয়া।
৩. ঘুম কম হাওয়া।
৪. মানিসিক ভাবে বিপদগ্রস্ত হাওয়া।
৫. কম পরিশ্রম করা।
৬. কতক ঔষধঃ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস,জন্মবিরতিকরণ বড়ি,ইনসুলিন ও কিছু ডায়বেটিস প্রতিষেধক ঔষধ ইত্যাদি সেবনে মেদ বা ভুড়ি বাড়ার কারন হতে পারে।

আরোও পড়ুন

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ১০ টি উপায়

পেটের চর্বি কমানোর ১০ টি সহজ উপায়

অতিরিক্ত মেদ বা ভূড়ি শরীরের সৌন্দর্য হ্রাস করে দেয়। অতিরিক্ত মেদ বা ভূড়ির কারনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে নানারকম রোগের সম্মুখীন হতে হয়। এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করবো কোন কোন টিপস্ অবলম্বন করলে মেদ বা ভূড়ি থেকে রেহাই পেতে পারেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ-

১. নিয়মিত ব্যায়াম

সুস্থ্য ভাবে জীবন-যাপন করতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়ামের উপকারীতার কোনো শেষ নাই। আপনারা নিশ্চিয়ই জানেন “সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল”

পেটের ভূড়ি বা মেদ কমানোর জন্য ব্যায়ামেই সর্বোত্তম পন্থা। আপনারা হয়তোবা লক্ষ্য দিয়ে থাকবেন যারা ক্ষেত-খামারে,রোদে-বৃষ্টিতে,কাজ করে, যাদের মাথার ঘাম মাটিতে পড়ে তাদের ফিটনেস কি রকম।

হয়তোবা বিষয়টি বুঝতে পারছেন ক্ষেত-খামারে যাওয়ার কোনো দরকার নাই। আপনি নিজ বাসায় থেকে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন তাহলে এর ফল আপনি নিজেই উপভোগ করতে পারবেন।

পেটের মেদ কমানোর জন্য কয়েকটি ব্যায়াম যেমনঃ প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধা বেলা হাঁটাহাঁটি করুন,স্কিপিং করতে পারেন ইত্যাদি।

২. গ্রিন টি

গ্রিন টিতে ততো বেশি ক্যাফিন না থাকলেও, প্রতি কাপে ২৫-৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। গ্রিন টিতে ক্যাটচিন থাকার কারনে যা প্রাকৃতিক ভাবে ভিসারাল ফ্যাট কমাতে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছ। আপনাদের যাদের এ সমস্যা তারা গ্রীন টি সংগ্রহ করতে পারেন। এবং নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩. লেবুর রস

ভাই লেবু যে কতোটা উপকারী শরীরের জন্য যা ভাষায় বলার মতো নয়। লেবুর রস ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেদ বা ভূড়ি কমানোর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।

লেবুর শরবত করে কিংবা গরম ভাতের সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। লেবু রেগুলার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে দেখতে পারবেন দ্রুত পেটে জমে থাকা মেদ বা ভূড়ি কমে যাবে।

৪. সাওম পালন করুন

রমজান মাসে সাওম পালন করা মুসলিমের জন্য ফরজ একটি এবাদত। যাদের অতিরিক্ত মেদ বা ভূড়ি রয়েছে তারা সাওম পালন করার কারনে দ্রুত কমে যাবে।

তাই আপনারা প্রতি সপ্তাহের অন্তত পক্ষে ২-৪ দিন সাওম পালন করার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনারা নিজেই উপভোগ করতে পারবেন সাওম পালন করার কতোটা উপকারী।

৫. স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহন

আপনারা যদি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করেন। তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত খাবেন কিন্তু পরিমাণে একটু কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টিসমৃদ্ধ আহার গ্রহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অ্যালকোহল গ্রহন নিষিদ্ধ করতে হবে।

পুষ্টিকর খাবারের জন্য সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন। যেমনঃ কাঁচা বাধা কপি, রাজমা ডাল,মটর, পুষ্টিকর ফল, ইত্যাদি।

৬. নারকেল তেল

নারকেল তেলে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড থাকে। গবেষনায় দেখা গেছে ফ্যাটি এসিড গ্রহনের ফলে আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারে এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে কম খেতে দেয়।

পুরুষের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে দেখা গেছে যে, তাদের ডায়োটে দুই চামচ নারকেল তেল যোগ করার ফলে একমাস পর তাদের কোমরের পরিধি ১ইঞ্চি কমে গেছে।

তাই আপনারা যারা এই সমস্যায় ভুগতেছেন তারা প্রতিদিন ডায়োটে দুই চামচ নারিকেল তেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৭. পানি

“পানি যার অপর নাম জীবন”। পানি ব্যতীত কোন জীব-জন্তুই বেঁচে থাকতে পারে না। পানি শরীরের জন্য একটি অত্যবশক উপাদান। প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি পান করার মাধ্যমে শরীরের মেদ বা ভূড়ি কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস্।

পানি পান করলে শরীর সতেজ থাকে,ক্লান্তিহীন দুর হয়,মন প্রফুল্ল থাকে,মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। তাই কোনো কিছু খাওয়ার পর নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

তাই মেদ বা ভূড়ি কমানোর জন্য পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

.৮. ভাজা খাবার পরিহার করা

যারা অফিসে কিংবা বাসায় ভাজা খাবার খেয়ে থাকেন। তারা হয়তো বা লক্ষ দিয়ে থাকবেন তাদের গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে, ভাজা খাবার গ্রহণে পেটের চর্বি বৃদ্ধি পায়।

তাই যারা ইতিপূর্বে ভাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। তারা এখনো সময় আছে ভাজা খাবার খাওয়া পরিহার করুন এতে করে শরীর ও মন সুস্থ থাকবে।

৯. সাদা চিনি পরিহার করুন 

 চিনিতে  থাকে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ এবং অতি সাধারন কার্বোহাইড্রেট। এটি অতিরিক্ত খাবার কারণে পেটের মধ্যে গ্লাইকোজেন রূপান্তরিত হয় যার ফলে  টিস্যুতে মেদ বা ভূড়ি জমাতে থাকে। 

সাদা চিনি যদি পরিহার করতে পারেন তাহলে তো কোনো কথায় নাই। তাই আপনার সাদা চিনির পরিবর্তীতে নানা রকম ফল মুল গ্রহন করতে পারেন। এতে করে আপনার মেদ ভুড়ি দূরত্ব কমে যাবে। এক সপ্তাহ নিয়মটি ফলো করুন। এর ফল আপনি নিজেই উপভোগ করতে পারবেন।

১০.স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করুন

স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করলে কোন খারাপ বন্ধুর প্রতারনার স্বীকার হবেন না। কারন, তখন আপনি ফ্যামিলীতে বেড়ে উঠবেন যে কারনে খারাপ সঙ্গ থেকে বিরত থাকবেন।

আর যখনেই খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়বেন তখনেই অ্যালকোহল,ফাস্টফুড ইত্যাদি সহ শরীর অনুপযোগী খাবার গ্রহন করতে বাধ্য থাকবেন। যার ফলে আপনার শরীরের মেদ বা ভূড়ি বাড়তে থাকবে। এক পর্যায়ে আপনি অসুস্থ্য হয়ে যাবেন। তাই আপনি পরিবারের সঙ্গে থাকুন এবং স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করুন।

পরিশেষে একটি কথায় বলতে চাই যারা উপরোক্ত সমস্যায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগতেছেন। তারা আমার আর্টিকেলে উল্লেখ্যিত টিপস্ গুলো ফলো করুন। আল্লাহর রহমতে খুব দ্রুতই এর ফল ভোগ করতে পারবেন।

6 Comments

  1. ভাইয়া স্বাস্থ্য বিষয়ক আরোও পোস্ট চাই।

    1. আমি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয়ে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করব। তাই অনুগ্রহপূর্বক আমার সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *