লাইফস্টাইল

ডায়াবেটিস কমানোর ১১ টি টিপস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত ভিউয়াস, আবার একটি নতুন আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

ডায়াবেটিস যার অর্থ হচ্ছে বহুমূত্র। ডায়াবেটিস হচ্ছে আমাদের শরীরের এমন এক মেটাবলিক রোগ, যা হলে শরীরে গ্লুকোজ বা সুগারের মাত্রা খুব বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এটি কিডনি ডেমেজ,হার্ট এর্টাক,স্ট্রোক ইত্যাদি বহু রোগের জন্য এটি দায়ী।

বর্তমান সমায়ে ডায়াবেটিস রোগটি ব্যপক আকার ধারণ করছে। এখন দেখা যায় ম্যাক্সিমাম মানুষরা ডায়াবেটিস রোগে ভুগতেছে। ডায়াবেটিস রোগের কারনে আরো বিভিন্ন প্রকার রোগের সম্মুখীন হতে হয়। এমন পরিস্থিতি স্বীকার হলে দেখা যায় মানুষটি কঠিনতম রোগে ভোগে।

এমনকি জরিপে দেখা গেছে যে, ১৯৮০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৮ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৮০ লক্ষ, আর বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২২ মিলিয়ন বা ৪২ কোটি ২০ লক্ষ। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,এই যে একটা বড় পার্থক্য। এখন থেকেই পরিষ্কার ভাবে বলা যায় যে,দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছি।

যখন কোনো ব্যাক্তি ডায়াবেটিস রোগে ভোগে তখন তার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হয় না। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি না হাওয়ায় গ্লুকোজ রক্তে জমা হয়। আর উচ্চ মাত্রায় গ্লুকোজ জমা হাওয়ার কারনে হার্ট অ্যাটাক সহ বিভিন্ন প্রকার রোগের সম্মুখীন হতে হয়। তবে হ্যাঁ নিয়মিত ,সুষম খাবার গ্রহণ করার ফলে শর্কাকরাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আজকের আর্টিকেলের শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন আমি কোন নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন আর অপেক্ষা না করে জেনে নেওয়া যাকঃ- কিভাবে ডায়াবেটিস রোগটি কমানো যায়?

ডায়াবেটিস কমানোর ১১ টি টিপস

কি কি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনি ডায়বেটিস রোগী

১. শরীরে দূর্বলতা অনুভব করা।
২. ঘন ঘন প্রসাব অনুভূত হাওয়া।
৩. ক্ষুদা বৃদ্ধি পাওয়া।
৪. ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে হাইপো হয়।
৫. অহেতুক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
৬. মিষ্টি দ্রব্যাদির ওপর আকৃষ্ট হাওয়া।
৭. শরীরের ক্ষত স্থান দীর্ঘদিন থাকা সত্বেও নিরাময় না হাওয়া অর্থাৎ ক্ষতস্থান পুরন না হাওয়া।
৮. চামড়া শুকিয়ে যাওয়া,খসখসে হাওয়া,চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়া।
৯. চোখে কম দেখা।
১০. বিরক্তিকর অনুভব করা এবং মেজাজ খিটখিটে হাওয়া।

ডায়াবেটিস রোগটি কোন ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায়?

গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বাবা- মা,ভাই-বোন,ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনরা এ রোগে ভোগে সেই ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা দেয়।

এছাড়া যারা কায়িক পরিশ্রম কম করে,মাঠে-ঘাটে কাজ করে না কিংবা যারা হাঁটাচলা কম করে মোটকথা হচ্ছে যারা অলস ভাবে জীবন-যাপন করে তাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি হাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যাদের হৃদরোগ আছে,রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেশি, তারা এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় মায়েদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।

আরোও পড়ুন

মেদ বা ভূড়ি কমানোর ১০ টি সহজ উপায়

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ১০ টি উপায়

ডায়াবেটিস কমানোর সহজ উপায়

এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করবো কোন কোন বিষয় বা দিকনির্দেশনা অবলম্বন করলে ডায়াবেটিস রোগটি সহজেই কমাতে পারবেন। তাহলে চলুন যেনে নেওয়া যাকঃ-

১. প্রতিদিন ১ বাটি করে সালাদ খান

সালাদ ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা পালন করে থাকে। অন্তত পক্ষে প্রতিদিন যদি ১ বাটি করে সালাদ খান তাহলে দেখা যাবে আপনার এই রোগের বৃদ্ধির মাত্রা দিন দিন কমে যাবে।

সালাদ হিসাবে রাখতে পারেন গাজর, শসা,লেবু,লেটুস,টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। দুপরে ও রাতে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর যদি পারেন সালাদের সাথে ভিনেগার যুক্ত করবেন। আর ভিনাগার রক্তকে কম পরিমান সুগার শোষনে সহায়তা করে থাকে। আর রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করে।

২.প্রচুর পরিমাণে হাটাহাটি করুন

আপনারা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে জানছেন অলস জীবন-যাপন করার কারনে ডায়াবেটিস রোগটি শরীরে বাসা বাঁধে। আপনারা যদি সকাল বিকাল প্রচুর পরিমাণে হাটাহাটি করেন। তাহলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবোন এবং দিন দিন এর বৃদ্ধির মাত্রা কমে যাবে।

তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগতেছেন তারা প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ১ ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করুন।

৩. কফি পান করুন

বেশ কিছু গবেষণা হতে এটা প্রামানিত হয়েছে যে প্রতিদিন ২,কাপ কফি পান করলে টাইপ -২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে ২৯%। আর হ্যাঁ, কফিতে চিনি মিক্স করা যাবে না। কফি অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উৎপাদনে সহায়তা করে।

তাই আপনারা কফি খাবেন আর এই রোগের মাত্রা কমিয়ে আনবেন।

৪. ফাস্টফুড পরিহার করুন

যারা এই রোগে আক্রান্ত তারা বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে ফাস্টফুড খাবার থেকে বিরত থাকবেন। আজকাল প্রায় সব জায়গায় ফাস্টফুড খাবার পাওয়া যায়,তাই নিজের লোভ-লালসা কে একটু কমিয়ে আনুন।

পিজ্জা,বার্গার, ফ্রাইস,মোগলাই ইত্যাদি লোভনীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে স্থুলতা বৃদ্ধি পাবে, উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা ও নানারকম রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিবে।

৫. নিম পাতা সেবন

আমাদের দেশে নিম গাছের অভাব নেই। আপনি জানেন কি? নিমপাতা ডায়াবেটিস রোগের জন্য কতোটা উপকারী। নিম পাতা বেঁটে গ্রহন করার ফলে ইনসুলিন রিসেপ্টর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে হাইপোগ্লাইকাইমিক ড্রাগের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনে। যা ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে আনে।

৬. আমলকি গ্রহণ করুন

আমলকী ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঔষধ তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগের জন্য সেবন করা হয়। আমলকীতে রয়েছে ঔষাধী গুনাগুন যা গ্রহণে ডায়াবেটিস রোগটি কমিয়ে আনা যায়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে,আমলকী রয়েছে ‘ভিটামিন সি’যা অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন তৈরি করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে।

প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৩-৪ টি আমলকী থেকে পিষে রস বের করুন। আর প্রতিদিন সেই রস সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার ডায়াবেটিস অনেকংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে।

৭. দারুচিনি খান

গবেষণা থেকে প্রমানিত হয়েছে যে,
দারুচিনিতে রয়েছে অসাস্থ্যকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লািসাইড এর মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। আর এই দুটি উপাদান প্রকৃতিক ভাবে কমিয়ে আনলে দেখা যাবে যে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

তাই দারুচিনি তেল বা পাউডার আকারে খাদ্য তালিকায় রাখুন। কারণ এটি ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনে ৪৮%।

৮. দেহের ওজন বজায় রাখুন

অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। তাই চেষ্টা করবেন কম খাওয়ার,ওজন কে যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আপনি জানেন কি? অস্বাস্থ্যকর ওজন শুধু ডায়াবেটিস নয় অনেক রোগের জন্য দায়ী। যদি আপনার শরীরের ওজন কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে ৭০% ঝুঁকি কমিয়ে আসবে।

৯. সূর্যের আলো

গবেষণায় দেখা গেছে ইনসুলিন প্রতিরোধের জন্য ডায়বেটিসের কারণ হিসাবে কম ভিটামিন- ডি খুঁজে পাওয়া যায়। ইনসুলিন তৈরি করতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই দেখা গেছে যে, যার শরীরে ভিটামিন ডি অভাব তার শরীরে ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগটি হাওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।

ভিটামিন ডি সূর্যের আলোতেয় আপনারা পেয়ে যাবেন। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সকাল বেলা সূর্যের আলোতে চলাফেরা করুন।

১০. পানি পান করুন

অতিরিক্ত পানি পান করলে ডায়াবেটিস রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের শরীরে পানি শুন্যতা রয়েছে। আপনার শরীরে শর্করার পরিমাণ যতো বেশি হবে ততো বেশি পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ২.৫-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।

১১. ধুমপান ত্যাগ করুন

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কথাটার যথাযথ প্রমাণ রয়েছে। ধুমপান সেবনে ডায়াবেটিস এমনকি ক্যান্সার মতো মরনব্যাধি রোগের সম্মুখীন হতে হয়। তাই আসুন ধুমপান ত্যাগ করি সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করি।

  • শেষকথা
    আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পড়ে একটুও উপকৃত হন তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। তাই উল্লেখ্যিত টিপসস গুলো ফলো করুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করবে। এই আশা ব্যক্ত করে আমি এখানেই আজকের মতো শেষ করছি। আবারও সালাম রইল আচ্ছালামু আলাইকুম।

6 Comments

  1. আমার দেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সাইট

  2. এই থেকে সঠিক তথ্য পেয়ে আমি খুবেই উপকৃত হয়েছি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *