ব্যাংকিং একাউন্ট

ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় নিয়ম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আসসালামু আলাইকুম। বর্তমানে ব্যাংকে সবাই টাকা নিরাপদে রাখতে চায়। আর বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট ক্রিয়েট করা যেনো একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক একাউন্ট নিমিষেই ক্রিয়েট করা যায়। আর এর জন্য প্রয়োজন কিছু ডকুমেন্টস তাহলে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।

আর আপনারা যারা আমার পোস্ট ভিউ করছেন তারা নিশ্চয়ই ব্যাংক একাউন্টের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। আর আমি চেষ্টা করবো আপনাদের মনে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে। তাহলে আমার সাথেই থাকুন,পুরো পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

ব্যাংক কি?

ব্যাংক কি? এই প্রশ্নের জবাবে আমি বলতে চাই যেখানে মানুষজন নিরাপদে অর্থ-সম্পদ জমা রাখে,আর সেখানে পুঁজি গড়ে তোলে। আর উক্ত পুঁজি উদ্যেক্তাদের মাঝে ঋন হিসাবে প্রদান করে এবং সেখান থেকে ব্যাংক লাভ বা মুনাফা অর্জন করে।

ব্যাংকের প্রকারভেদ

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংকের প্রকারভেদ

১.সরকারি ব্যাংক
২. বেসরকারি ব্যাংক
৩. এনজিও ব্যাংক
৪. স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংক
৫. আংশিক ব্যাংক
৭. বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক
৮. সরকারি,বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক

ব্যাংকের কার্যক্রমের ভিত্তিতে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মূলত এসব ব্যাংকের নাম দেখেই বুঝা যায় এটি কোন ব্যাংক।

১. কৃষি ব্যাংক
২. কেন্দ্রীয় ব্যাংক
৩. শিল্প ব্যাংক
৪. বানিজ্যিক ব্যাংক
৫. বিনিয়োগ ব্যাংক
৬. পরিবহন ব্যাংক
৭. বিনিময় ব্যাংক
৮. বন্ধকি ব্যাংক
৯. ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প ব্যাংক
১০. আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক

কাঠামোর ভিত্তিতে ব্যাংকের প্রকারভেদ

১. মিশ্র ব্যাংকিং
২. চেইন ব্যাংকিং
৩. গ্রুপ ব্যাংকিং
৪. একক ব্যাংকিং
৫. মার্চেন্ট ব্যাংকিং
৬. শাখা ব্যাংকিং

ব্যাংকের সংগঠনের উপর ভিত্তি করে কয়েক ভাগ করা হয়েছে তা নিম্নেঃ-

১. সমবায় ব্যাংকিং
২. বিশেষায়িত ব্যাংকিং
৩. রাষ্টীয় ব্যাংকিং
৪. যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংকিং
৫. অংশীদারি ব্যাংক
৬. একক মালিকানাধীন ব্যাংক

পরিচালনাকারীর উপর ভিত্তি করে ব্যাংকের প্রকারভেদ

১. স্কুল ব্যাংক
২. শ্রমিক ব্যাংক
৩. ভোক্তা ব্যাংক
৪. মহিলা ব্যাংক

ব্যাংকের কার্যক্রমের অঞ্চলের ভিত্তিতে ব্যাংকের প্রকারভেদ

১. আন্তর্জাতিক ব্যাংক
২. আঞ্চলিক ব্যাংক
৩. জাতীয় ব্যাংক

এছাড়াও রয়েছে ‘ইসলামী ব্যাংক’ যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।

ব্যাংকের একাউন্টের প্রকারভেদ

তো ভিউয়াস, এখন আলোচনা করবো ব্যাংকের যে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হয়। সেই একাউন্টটি কতো প্রকার সে বিষয়ে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো।

কারেন্ট একাউন্ট বা চলতি হিসাব

যেকোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক এ ধরনের ব্যাংক একাউন্ট ক্রিয়েট করা হয়। একাউন্টে যেকোনো সময় টাকা জমা কিংবা উত্তোলন করা যায়। আর এ ধরনের একাউন্ট থেকে ব্যাংক কতৃর্ক কোনো প্রকার ইনটেরেস্ট বা সুদ প্রদান করা হয় না। বরং গ্রাহকের কাছ থেকে বাৎসরিক ফি কেটে নেওয়া হয়। এধরণের ব্যাংকে ডেবিট কার্ড,চেক বুক,গ্যারান্টি কার্ড,এমনকি ওভারড্রাফটের মতো প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে।

সঞ্চয় হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট

নাম দেখেই বুঝতে পারছেন এখানে মূলত টাকা জমা রাখা হয়। আর সেই টাকা থেকে নিদিষ্ট পরিমানের একটা সুদ পাওয়া যায়।

সেভিংস একাউন্ট বেশিরভাগ স্টুডেন্ট, বেতনভোগী কর্মচারীরা,পেনশন পাওনাকারীরা ব্যাবহার করে থাকে।

ব্যাংক কতৃর্ক মুনাফা দৈনিক,সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসারিক ভিত্তিতে হতে পারে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় এই একাউন্টে টাকা জমা রাখতে পারেন।

রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট

এই ধরনের একাউন্টে নিদিষ্ট সময়সাপেক্ষ অনুযায়ী টাকা জমা রাখা হয় এবং সেই টাকার উচ্চ ইনটেরেস্ট সহ উত্তোলন করা যায়। এই ধরনের একাউন্টে মাসিক ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হয়। এই ধরনের একাউন্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে ১০ বৎসর হয়ে থাকে।

ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট

এই ধরনের একাউন্টে নিদিষ্ট সমায়ে নিদিষ্ট পরিমানে টাকা জমা রাখা যায়। সাধারণত শর্ত নিদিষ্ট সময় অতিবাহিত না হাওয়া পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করা যায় না। সুদের হারের পরিমাণ, সময়সীমা ইত্যাদি ব্যাংকভেদে একেক রকম হতে পারে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার ফরম

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ব্যাক্তিসাপেক্ষ ফরম দুই প্রকার
১. ব্যাক্তিগত একাউন্ট ফর্মঃ ব্যাক্তি উদ্যেগে যে ফরম ক্রিয়েট করে জমা করা হয় সেটিই মূলত ব্যাক্তিগত ফরম। আর এই ফর্ম ব্যাবহার করে যেকোন ব্যাক্তির নামে একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
২. প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্মঃ ব্যাক্তি উদ্যেগ ব্যতীত প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক যে একাউন্ট ফর্ম ক্রিয়েট করা যায় মূলত এটাই প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী

ব্যাংকে একাউন্ট ক্রিয়েট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার হয়ে থাকে। উল্লেখ্য বিষয় যে,একেক ব্যাংক ভেদে একেক রকম কাগজপত্রের দরকার হয়।

১. ব্যাংক কতৃর্ক একাউন্ট ফরম
২. সাম্প্রতিক সমায়ে তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি (সত্যায়িত করার প্রয়োজন হতে পারে)।
৩. সাম্প্রতিক সমায়ে তোলা নমনীর পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি।
৪. একাউন্ট হোল্ডার ও নমনি উভয়ের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র যেমনঃ জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট /ড্রাইভিং লাইসেন্স
একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খোলার নিমিত্তে ট্রেড লাইসেন্স বা প্রতিষ্ঠানের সিল প্রয়োজন হয়ে থাকে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি

১. ফরমঃ যতাযত নিয়মে ফরমটি পুরোন করুন।
২. সিগনেচার কার্ডঃ সিগনেচার কার্ডে হোল্ডারের সাক্ষর দিতে হয়। এই কার্ডটি ফর্মের সাথে পাওয়া যায়।
৩. নমনিঃ একাউন্ট যিনি খুলবেন তার অনুপস্থিতিতে যিনি থাকবেন উপস্থিত সে নমনি।

উল্লেখিত কাগজপত্র একত্র করে যে ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে চান সে ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। তবে আপনি ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে সম্পুর্ন ডিটেইলস সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আপনি এসব বিষয়ে জানতে পারলে নিমিষেই ব্যাংক একাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন।

অনলাইনে যেসব ব্যাংকের একাউন্ট খোলা যায়

তো ভিউয়াস, আপনাদের সুবিধার্তে কিছু কিছু ব্যাংক অনলাইনে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি চালু করছে। এখন আর স্ব-শরীরে ব্যাংকে উপস্থিত না থেকে ঘরে বসে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন।

যেসব ব্যাংকে অনলাইনে ক্রিয়েট করতে পারবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

১. ডাচ বাংলা ব্যাংকঃ গুগল প্ল-স্টোর থেকে ‘Nexus Pay’ অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। আর আপনি নিজে নিজে ক্রিয়েট করুন ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট।
২. ন্যাশনাল ব্যাংকঃ গুগল প্লে-স্টোর থেকে NBL iPower অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। আর আপনি নিজে ক্রিয়েট করুন ন্যাশনাল ব্যাংক।
৩. সিটি ব্যাংকঃ Ekhoni App থেকে সিটি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৪. ইসলামি ব্যাংকঃ CellFin App থেকে ইসলামি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৫. সোনালি ব্যাংকঃ Sonali eSheba App থেকে সোনালি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৬. ইউসিবিঃ UClick App ব্যাবহার করে ইউসিবি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।

উল্লেখ্যিত ব্যাংক ছাড়াও আরো ব্যাংক রয়েছে যা অনলাইনের মাধ্যমে ক্রিয়েট করা যায়।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *